Sunday, September 28, 2014

একটি উপন্যাস লিখার চেষ্টা













অন্ধকার ঘরে একা একা কাগজের টুকরা ছিড়ছি। মাথা কেমন ঝিম ঝিম করছে। ইলেক্ট্রিসিটি গেছে সেই কবে, আসার কোন নাম গন্ধ নেই, কি আজব দেশেই না বাস করি, প্রচন্ড রাগ হলো, দেশটা গেল একে বারে রসাতলে। মিস্টি এক বাতাসে শরীর জুড়িয়ে গেল। বাইরে খুব সুন্দর জোৎনার আলো। জানালা দিয়ে সেই আলো পড়ল আমার শরীরে। খুব একটি মায়াবী পরিবেশ, তখন ভাল লাগতে শুরু করেছে। জানালার ফাকে উপভোগ করতে লাগলাম সেই ভরা জোৎনাকে। অদ্ভুত সুন্দর এক মনোরম পরিবেশ। 





চিন্তা করতে থাকলাম এই সিচুয়েশনে কি করব? অনেকদিন খেটে একটি উপন্যাস লিখেছি, এটার বিষয় হ্যাকিং নিয়ে হওয়ায় কোন প্রকাশক তেমন মাথায় আনছেন না।কত জনের কাছে ধড়না দিলাম, কিন্তু তাদের ব্যাবসািয়ক চিন্তার কারনে বার বার মার খেতে হচ্ছে।  তাহলে কি এই সমাজে হ্যাকারদের খারাপ চোখে দেখে? কেন, হ্যাকার রা তো অপরাধী না, এট লিস্ট সবাই তো না। একটা সুন্দর ফুলের বাগানে এরকম ক্ষতি কারক পোকা মাকর থাকবেই। তাই বলে দেশের একটি মেধাবী সমাজকে কেন অবহেলিত হবে? যারা দেশের জন্য রাত জেগে সাইবার স্পেস পাহারা দিয়েছিল, যারা নিজেদের মূল্যবান সময় নস্ট করে বিদেশি হ্যাকারের আক্রমনের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিয়েছিল, যারা বাংলাদেশের সাইবার স্পেসের আর্মির মত একের পর এক অপারেশন করেছিল তাদেরকে দেশ এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাবে আশা করিনি। যদিও আমি তাদের কেউ নই, কিন্তু তাদের সেদিনের ভূমিকার কথা ভুলিনি। আমি এক জন সাধারন লেখক। লিখেই আমার জীবন চলে। একদিন মনে হলো আমার উপান্যাসের বিষয় হতে পারে হ্যাকিং! কেন নয়। একজন হ্যাকারের জীবন অন্য ১০ টি মানুষের স্বাভাবিক জীবনের চেয়ে আলাদা। তাদের সাথে মিশে তা বুঝতে আমি দ্বিতীয় বার ভুল করিনি। সেই দিনেই বুঝে গিয়েছিলাম তাদের দেশ প্রেমের শক্তি, যা আমাকে শুধু মুগ্ধই করেনি, কৃতজ্ঞটার বাঁধনে আবদ্ধ করেছে। তাই কিছু দিন তাদের কমিউনিটির সাথে মিশে দেখেছি, আর অবাক হয়েছি। বুঝে নিয়েছি অনেক কিছু। তাদের যে চাপা কস্ট আছে, সে কস্ট কোন দিন তারা প্রকাশ করে না। তাদের মাঝে অদ্ভুদ কিছু ক্ষমতা আছে যা দিয়ে তারা খুব তাড়াতাড়ি মানুষকে পটিয়ে ফেলে।তাই আমার উপন্যাসে তুলে ধরেছি একজন হ্যাকারের জীবন। তার পারিপার্শিক অবস্থা, তার হাসি, কান্না, পরিবার – পরিজন ইত্যাদি। আমি নিশ্চিত আমার আমার এই উপন্যাস প্রকাশিত হলে দেশে হইচই পরে যাবে।  





কিন্তু প্রকাশকরা তা বুঝতে চান না ! কেন তারা  বুঝতে চান না তাদেরও জীবন আছে, গল্প আছে, ভালবাসা আছে। তাহলে তাদের নিয়ে উপন্যাস ছাপতে প্রকাশকের সমস্যা কোথায়। বিড় বিড় করে গালি দিলাম। সব প্রকাশক শালারা ভন্ড। ২ পয়সার প্রেমের কাহিনী তাদের কাছে অনেক বিরাট কিছু আর দেশের সাইবার যুদ্ধাদের গল্পের প্রতি তাদের কোন সম্মান নেই। সব শালাদের সাইট হ্যাকাইয়া তাদের ব্যাবসার লাল বাত্তি জালানো উচিত!!! মেজাজটা হঠাৎ গরম হলো। পানির গ্লাসটাও খুঁজে পাচ্ছি না। এদিকে অন্ধকার দেখছি সব! রাগে নিজের মাথার চুল ছিড়লাম। এমন সময় বেজে উঠল ফোনটা। একে তো মেজাজ খারাপ, কে ফোন করল এমন সময় রাগে গিজ গিজে করে ফোনটা পিক করলাম

-হ্যালো...
-জী, লেখক মি. অমুক বলছেন?
-জী বলুন
-জী, আপনি বোধহয় আমার অফিসে এসেছিলেন, আমার এসিস্ট্যান্স সব আমাকে বলেছে। আমি রাজি আপনার উপন্যাস ছাপতে, তবে কিছু শর্ত আছে।
-সত্যি!!! অনেক ধন্যবাদ তবে কি শর্ত
-আপনি কাল আমার গুলশানের বাসায় আসেন।
-ঠিক আছে।
-আর হ্যাঁ, অবশ্যই আপনার স্ক্রীপ্টটা নিয়ে আসবেন সাথে।
-ঠিক আছে , অনেক ধন্যবাদ। কাল দেখা হচ্ছে তাহলে।





ফোনটা কেটে গেল J মনে মনে খুশি হলাম যাক শেষ পর্যন্ত কাউকে পেলাম।

পরের দিন সেই প্রকাশকের বাসার দিকে রওনা দিলাম। বিশাল বাসা, দেখে অবাকই হতে হয়। বিশাল বাসার সামনে বসার সুন্দর জায়গা, আমাকে অভর্থ্যনা জানালেন তিনি। ভদ্র লোকের বয়স দেখে অনুমান করলাম ৫০ এর কাছাকাছি হবে, তবে অনেক স্মার্ট, মার্জিত পোষাকে তা কিছুটা অনুমান করতে পারছি। লোকটা দেখি পান ও খাচ্ছে, লাল ঠোট। হাত দিয়ে বসার ইঙ্গিত দিলে বসে পড়লাম।

-   বুঝলেন আমিও ভেবে দেখেছি কিছু অজানা জিনিষ আমাদের সমাজের মানুষের জানা উচিত। আপনার উপন্যাস পড়িনি , তবে আপনার উপন্যাসের বিষয়বস্তুটা আমার খুব মনে ধরেছে। পান চিবুতে চিবুতে বললেন লোকটা।
-   অনেক ধন্যবাদ, এই যে নিন স্ক্রীপ্ট।
-   ঠীক আছে, দেখা লাগবেনা। আমি আপনার লেখা প্রকাশ করব।
-   বলে কি লোকটা!!! অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। কিন্তু......
-   কোন কিন্তু নেই, এই যে আমার কার্ড, কাল চলে আসুন। আপনার অপেক্ষায় থাকব।
-   সত্যি আপনার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা।


৬ মাস পর......


অবশেষে আগামী কাল আমার লেখা উপন্যাসটি প্রকাশিত হতে যাচ্ছে, যেখানে মোড়ক উম্মোচনে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের কিছু বড় বড় হ্যাকাররা। তাদের নাম বলতে পারছিনা তাদের নিরাপত্তার সার্থে। তবে কোন একদিন হ্যাকার রা প্রকাশ্যে দিবা লোকে হ্যাকার ট্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়াবে, বাংলাদেশ সরকার, পুলিশ, র‍্যাব, সব ধরনের সংগঠনে হ্যাকারদের মত মেধাবীদের দিয়ে চালিত হবে। সরকারী সাইটের এডমিনের দায়িত্ব বর্তমান গরু গুলো কে লাত্থি দিয়ে বের করে এসব সাইবার এক্সপার্টদের তাদের কাজের প্রতি সম্মান জানানো হবে। বাংলাদেশের সাইট আর বিদেশী হ্যাকার দারা হ্যাক হবে না। বাংলাদেশের সাইবার স্পেস পড়িনত হবে এক দুর্ভেদ্য দুর্গে! গোয়েন্দা সংস্থা, ইন্টেলিজেন্সে এই হ্যাকাররাই রাখবে তাদের মেধার সাক্ষর। পুলিশ, আর্মি, র‍্যাব, সরকার সবাই এই মেধাবীদের সাথে কাজ করবে। কারন আমার লেখা এই উপন্যাস মানুষের সেই ঘুমন্ত বিবেককে জাগ্রত করবে। 

আমি অনেক অনেক এক্সাইটেড! কালকের দিনটির জন্য। সময় যাচ্ছেই না। প্রতি সেকেন্ডকে মনে হচ্ছে এক একটা বছর!!! ঘড়ির কাটা এগিয়ে চলছে আর আমার হৃদস্পদন ও যেন ঘড়ির কাটার সাথে তাল মিলাচ্ছে !!! টিক!!! টিক!!! টিক!!!! 






1 comment:

  1. I want to join with your hacker group . Please help me . I want to save Bangladesh and Bangladeshi people, like you. Please, Please. Brother Help me .

    ReplyDelete