একেবারেই নতুন যারা তাদের
জন্যই কথাগুলো বলা।
সম্ভবত কেউ যদি প্রথমবারের মত তার ফেসবুক আইডি খুলে এবং সে এসেই প্রথম যে বিষয়টার প্রতি আগ্রহ থাকে সেটা হলো হ্যাকিং। হ্যাকিং কিংবা হ্যাকার যা কিছু দিন আগেও বাংলাদেশের মানুষের কাছে অজানা ছিল, ২০১২ সালে বাংলাদেশ আর ভারতের সাইবার যুদ্ধের পর আজ তা যেন খুলে বসেছে বিশাল ডানা। আজ সবাই চায় হ্যাকার হতে, সেটা যে কোন উপায়েই হোক না কেন! সাইবার যুদ্ধের সময় হ্যাকার, হ্যাকিং গ্রুপ ছিল হাতে গোনা। আর এখন? হ্যাকার গ্রুপের ছড়াছড়ি।
কেউ কিছু পারুক না পারুক, নামে – বেনামে গ্রুপ খুলে যাচ্ছে আর শো অফ করে যাচ্ছে। আর তাদের শিকার হোন সাধারণত একেবারে জিরো লেভেলের মানুষেরা । যারা বোঝেনা হ্যাকিং কি? এটা স্রেফ তাদের কাছে যাদুর মত মনে হয়। তারা ভাবেন হ্যাকাররা জাদু জানে। যে কেউ চাইলেই ফেসবুক হ্যাক করতে পারে! আর ফেসবুকের প্রতি মানুষ ভয়াভহ রকমের আসক্ত! ব্যাতিক্রম ঘটেনি হ্যাকিং এর প্রতিও । তাই দুটোর সংমিশ্রনে মানুষ ফেসবুক (ঠিক ফেসবুক না , ফেসবুক আইডি। আইডি আর ফেসবুক সাইট এক জিনিষ না ) হ্যাকিং বা ফেসবুক আইডি হ্যাকিংকেই মনে করেন হ্যাকিং এর একমাত্র পদ্ধতি। সোজা কথায় তারা ভাবে হ্যাকিং মানেই ফেসবুক হ্যাকিং। যদিও আদৌ ব্যাপারটা তা না । তাই তো মানুষের রিকুয়েষ্ট দেখে অনেকেই মাথা ঠিক রাখতে পারেনা। কেউ কেউ আসে তার বয়ফ্রেন্ডের একাউন্ট হ্যাক করার জন্য, কেউ বা তার গার্লফ্রেন্ডের। কেউ বলে ঐ ছেলেটা আমার শত্রু, ওর আইডি হ্যাক করেন। সব কিছুতেই কেমন জানি একটা অধিকার হাকানো!!! ভাইরে! কেউ তাদের কি কোন কাজ নাই? তাদের কি পড়াশোনা নাই, তাদের কি ব্যাক্তিগত কাজ নাই? তারা কি মানুষ না? তারা কেন আপনার পিছনে সময় দেবে? তার কি সময়ের দাম নাই? অনেকেই টাকা অফার করেন! আসলে এখানে টাকার জন্য কেউ কাজ করে না। (ল্যামারদের কথা বাদ দিলাম। তারা তো প্রকাশ্যে ১০০ টাকা দিয়ে ফেসবুক আইডি হ্যাকান।) যারা আসলে কাজ করেন তাদের কে কখনোই টাকা দিয়ে কেনা সম্ভব না!
আর যারা এরকম দাবী করেন তাদের বোঝা উচিত কেউ তার কথার গোলাম না। তার কথা শোনার জন্য বাধ্য না। ওরা আপনার টাকা মেরে খেয়ে দেয়নি যে এভাবে যা ইচ্ছা আজগুবি টাইপের আবদার করবেন। আবার সাড়া না পেলে গালমন্দ করবেন!
হ্যাকিং অনেক রকম আছে। আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, আপনার
ব্যাংক একাউন্ট হ্যাক, আপনার কম্পিউটার, স্কাইপ
আইডি, ক্রেডিট কার্ড, পেপাল কার্ড, ওয়েব
সাইট, এটিএম বুথ, এরকম
আরো অনেক কিছু আছে যা হ্যাকাররা হ্যাক করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হ্যাকিং জিনিষটা প্রথম উঠে আসে প্রতিবাদ জানানোর ভাষা হিসেবে। ফেলানী হত্যা এবং সীমান্তে মানুষ হত্যা নিয়ে বাংলাদেশী
হ্যাকাররা মিশন শুরু করে এবং বিষটি অতি আলোচিত
হওয়ায় অতি অল্প সময়ে ছড়িয়ে যায় সব দিকে।
হ্যাকিং মানেই ফেসবুক হ্যাকিং ! এই ধারনাই বলে দেয়
হ্যাকিং সম্পর্কে প্রকৃত ধারনা নেই ৮০% মানুষেরই। আর এটিকেই মোক্ষম সুযোগ
হিসাবে ব্যাবহার করে
সাইবার স্পেসে
সেই অতিমাত্রিক হ্যাকিং এ আসক্ত কিছু ব্যাক্তি। যারা কিছু পারুক
আর না পারুক, নিজেকে সবার সামনে বড়
হ্যাকার হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া। ফেসবুক হ্যাকিং কে বড় অস্ত্র করে এই সব ভন্ড
প্রতারকরা শুরু করে
জঘন্যতম মানুষ
ঠকানো নির্লজ্জ ব্যাবসা। যা দেখলে লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যায়। ভাবতে লজ্জা
লাগে তারা ফেসবুক আইডি হ্যাক করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা
করে। কিন্তু আইডি
প্রতি তাদের দাবীকৃত অর্থ হলো ৫০,৭০,১০০ থেকে শুরু করে সবোর্চ
৩০০ টাকা। যাদের সামান্য কমেনসেন্স আছে তাদের বোঝা উচিত ফেসবুক কোটি
কোটি ইউজারের একটি সাইট। যেখানে কাজ করেন সারা বিশ্বের সব চেয়ে বড় বড় সিকিউরিটি বিষেজ্ঞরা।
তাদের মাসিক বেতন বাংলাদেশী টাকায় কোটি কোটি টাকা। আপনার কি মনে হয়, যে সাইটে কাজ করেন
বিশ্বসেরা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার,
প্রোগ্রামার, সিকিউরিটি বিষেজ্ঞরা
সেখানে এই স্বঘোষিত ২ টাকার হকার রা হ্যাক করে দেবে ফেসবুক? ফেসবুক
যে সিকিউরিটি ব্যাবস্থা দিয়ে রেখেছে তাতে কারো
ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক করা দুরুহ হয়ে পড়েছে। ইউজাররা যদি ঠিক মত সিকিউরিটি গুলো দিতে জানে তাহলে কখনোই বেহাত
হবেনা। এমন কি কেউ পাসওয়ার্ড পেয়ে গেলেও না। সুতরাং যারা ফেসবুক ইউজ করেন তাদের জানা উচিত
সিকিউরিটি গুলো কি কি। নিজের
ঘরের দরজা বন্ধ না করে ঘুমালে ডাকাতি হওয়ায় স্বাভাবিক!
হ্যাকিং জগতটা অনেক বিশাল। এখানে এইটা পারি (স্পেসেফিক কিছু ) বলার আগে অনেক কিছু ভেবে দেখার অবকাশ আছে। কারন দেখা যায় ঐটাও রেগুলার আপডেট হচ্ছে। তাই অতীতে যাই শিখুন না কেন তা সময়ের সাথে নতুন করে আপডেট হচ্ছে আর সেগুলোও শিখতে হয়। আর আপডেটেট না হলে যা হবে, আগের শেখা বিদ্যাটা আর কাজ করবেনা। কারন প্রতিনিয়ত সব কিছু আপডেট হচ্ছে। কোন বাগ থাকলে তা তারা পরবর্তীতে ভার্সনে ফিক্সড করে আপডেট করছেন। সুতরাং এখানে কনস্ট্যান্ট কিছু নেই। মুখস্তের কিছু নেই। ক্রিয়েটেভিটি দরকার।
ব্যাপারটা এমন না যে এটা সিলেবাস, এটা এটা করলে আপনি শিখতে পারবেন। এমন না যে কিছু টিউটোরিয়াল দিলাম আর শিখে গেলেন। এটা সাধনার ব্যাপার, মেধার ব্যাপার, ক্রিয়েটিভিটির ব্যাপার। যার যত মেরিট, যে যত ক্রিয়েটিভ, সে ততই ভাল হ্যাকার হতে পারে । আর জিনিষ গুলো অর্জন করতে হলে নিজেকেই দিন রাত পরিশ্রম করে অর্জন করতে হয়। , ফোরাম, গুগল, ইউটিউব, সমগ্র ইন্টারনেটের জালে রয়েছে অজস্র রিসোর্স!!! যা আপনি সারা জীবন শিখেও শেষ করতে পারবেন না। আমরা যা করতে পারি তা হলো হেল্প! আসলে কেউ কাউকে শিখাতে পারে না। হেল্প করতে পারে মাত্রকারন আমি যে জিনিষ বুঝি তা আমার কাছে পানির মত সহজ। কিন্তু যখন কাউকে বোঝাতে যাই তখন সে অনেক কিছুই বুঝে না। বেসিক জ্ঞান গুলো না থাকলে সেটাই হয়। মনে রাখবেন কেউ শত চেষ্ট করেও আপনার মাথায় কিছু ঢোকাতে পারে না। সে কাজটা নিজেকেই করতে হবে। আপনার মস্তিস্ক, কান সম্পুর্ন আপনার। কেউ জোর করে আপনাকে গিলায় খাওয়ায় দিতে পারবেনা। এটা নিজেকে নিজের মত করে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। প্ল্যাটফর্ম এ পা না দিয়ে দাড়ানোর চেষ্টা করলে যা হয়, ঠিক তেমনটিই এখানে হয়। আর এটাই সবাই বেশি ফলো করে । কেউ কষ্ট করে শিখতে রাজিনা। সবাই শর্টকার্ট পদ্ধতিতে, হ্যাকার হতে চায়। অনেকেই দু একটা সাইট এসকিউএল করতে জানাটাকে হ্যাকিং মনে করেন, অনেকেই কয়েকটা সাইট ডিফেস দিয়ে ভাবেন অনেক বড় হ্যাকার হয়ে গেছেন। আবার অনেকেই নামের পাশে লিখেই ভাব নিতে থাকেন। এই তো দুই দিন আগের ঘটনা, একজন ইনবক্স করল ভাই এই সাইটের কলাম বের করেন।বললাম আগে শিখেন ভাল করেন। সে বলল ভাই আমি সব পারি। পরে ভার্সন বের করে দেখি এটা ভার্সন ৪। বললাম এটা হবেনা। তখন সে বলল ভাই ভার্সন টা মিডিয়াফায়ারে এ আপলোড দেন প্লিজ ! এই হলো অবস্থা! সব জানার উদাহরন! তার পরেও আমাদের অনেকেই এরকম। কিছুনা না জেনে জানার ভান করা। কিছু না জানাটা অপরাধ না! না জেনে জানার ভান করাটা অপরাধের।
চলবে…
আরো জানতে চাই,আরো বুজতে চাই।যত পড়ছি ততই জানার ইচ্ছা বাড়ছে।মনে হচ্ছে এতদিন এ কেও সত্য কথা বলছে।কেও সঠিক পথ দেখাচ্ছে।
ReplyDeleteakdom thik bro.. amio akmot
DeleteVai pls r o likhen,khub valo lagche j sotto ta ki ta jante partechi.
ReplyDelete