Sunday, April 5, 2015

হ্যাকিং এবং হ্যাকার (পর্ব- ৪ )





আবারো স্বাগতম সবাইকে। হ্যাকিং জগতের খুঁটিনাটি নিয়ে লেখা ধারাবাহিক পর্বে J সবার কল্পনাতীত সাড়া পেয়ে কন্টিনিউ করার অনুপ্রেরনা পেয়েছি। যাইহোক, আগের পর্বগুলোতে দেখেছি হ্যাকিং নিয়ে পর্যাপ্ত ধারনা নেই বেশিরভাগ মানুষের । তারা এটাকে দেখে অনেকটা ইলিউশনের মতো। তাদের কাছে স্বাভাবিকভাবেই এটা মজার জিনিষ। আবার সঠিক ধারনা না থাকায় তারা এটাকে ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে সব ব্যাপারে গুলিয়ে ফেলেন। তাদের ধারনা কম তাই তাদের এক্সপেক্টেশন খুব বেশি । কিন্তু যারা একেবারেই নতুন সাইবার লাইফে ঢুকে তাদের কি অবস্থা? কি মনে হয়? আমজনতার চেয়ে তাদের ধারনা বেশি??? 


মোটেও নয়! বরং অতি উৎসাহীরা বিপদ্গামী হয়। তারা আমজনতার চেয়েও বাজে ধারনা রাখে। অতি এক্সাইটমেন্টে তারা ঘটিয়ে বসে অনাকাঙ্ক্ষিত সব ঘটনা। আজকের পর্বটা তাদের উদ্দেশ্যেই। 


শুরুটা হয় কোন হ্যাকিং গ্রুপের বা কারো কোন ডিফেস পেজ দেখে। একেবারেই নতুন যারা ডিফেসিং করে তাদের অনেকেই নিজের গ্রুপে লিঙ্ক দেওয়ার পাশাপাশি অন্য সব গ্রুপে গিয়ে পোষ্ট করে আসে, হ্যাকড বাই মি, অমুক , তমুক। আবার কিছু আগে দেখলাম কয়েকজন এতেও সন্তুষ্ট না, তারা এর ওর প্রোফাইলে গিয়ে ভাব নিতে দেখা যায়, হ্যাকড বাই মি। ওকে তাদের ব্যাপারে পরে আসছি। কথা হচ্ছিল একেবারে নতুন যারা হ্যাকিং জগতে ঢোকার জন্য মরিয়া তাদের নিয়ে। তো, ঐ গ্রুপ বা টাইম লাইনে এ পোস্ট গুলো দেখার পর অনেকেই সিরিয়াস ইন্টারেস্টেড হয়ে যায়। আর ভাবে আমিও হ্যাকার হব। শুরু হয় দৌড়ঝাপ!!!



রিলেটেড কাউকে পাওয়া গেলে রিকুয়েস্ট করা শুরু করে। অভিজ্ঞতা বলে এদের বয়স খুবই কম। যারা কোন কিছু বিচার বিবেচনার ক্ষমতা রাখেনা। যারা আবেগ দিয়ে চালিত হয়, বিবেক দিয়ে নয়।   তারা হ্যাকিং শিখবে শিখবে করে একেবারে অধৈর্য্য হয়ে যায়।  আর তারায় সব চেয়ে বিপদ গামী!!!  কারন তাদের জন্যই একদল প্রতারক তাদের সীমাহীন এই এক্সাইটমেন্টকে কাজে লাগিয়ে তাদের পন্য বানিয়ে ফেলে!!! কিছু দিন আগেই এমন ঘটনা ঘটেছে। যাদের হ্যাকিং শিখানোর নামে প্রতারক চক্রটি নিজেদের আক্রোশ মিটাতে গিয়ে ঐসব আগ্রহীদের শুধু নিজেদের গোলামই বানিয়ে রেখেছে! আর ঐসব অতি আগ্রহী ব্যাক্তিরা তখন পড়ে থাকে রঙ্গীন চশমা। তাই তারা সহজ সরল মনে সব করে যায়। যত নীচে নামতে হয় তারা নামতে রাজী! যাই করতে হোক, তারা করতে রাজী! তাদের বিবেক বাঁধা পড়ে যায় সেই সীমাহীন আগ্রহের দিকে। আর এটাকেই মোক্ষম সুযোগ ভেবে এই ধরনের অতি উৎসাহীদের নিয়ে তৈরি হয় প্রতারক সুবিধাবাদীদের ল্যামিং প্ল্যান।  কিন্তু যারা অতি উৎসাহে  এসব করে তাদের কোন একদিন গিয়ে ভুল ভাঙ্গে ! তারা বুঝতে পারে এতদিন ঘরের খেয়ে পরে মোষ তাড়াতে গেছে! কিন্তু তখন তাদের কিছু করার থাকেনা। ততদিনে তারা বাঁধা পড়ে যায় প্রতারকদের দেওয়া এভিডেন্স গুলোতে। তারা ভয় পায়, আর প্রতারক চক্রও এটাকে অস্ত্র বানায়!



একটা কথা বলে রাখা ভাল, বড় বড় হ্যাকিং গুলো কখনোই ১০০% কোয়ালিটি ফুলফিল না করে কাউকে তাদের মেম্বার বানায় না। এজন্য নতুন  একজনের লাগতে পারে মিনিমাম ১ বছর বা তারো বেশি! তাদের প্রশিক্ষন দেওয়া  হয়, তাদের কেয়ার নেওয়া হয়, সেভাবে তাদের তৈরি করা হয় যাতে ভবিষ্যতে সেই টীমের দক্ষ পরিচালনা এবং মিনিমাম কোয়ালিটি ধরে রাখতে পারে। আর তারা মেম্বার নেয় বছরে ১ বার বা ২ বছরে একবার। যদি গ্রুপ গুলো সবাইকে এভাবেই এড করা শুরু করে তাহলে তা আর হ্যাকিং গ্রুপ থাকে না, মাছের বাজার হয়ে যায়!  আর খুব সহজে কেউ যদি ঢুকেও যায়, তারা এর মর্ম বুঝতে পারেনা।   এরকম টীম আছে হাতে গোনায়!  প্রকৃত হ্যাকিং টীমে একজন আনকোরা! একেবারে নতুন ! তাদের কখনোই আশা করা যায় না। সুতরাং যারা বিনা পারিশ্রমিকে কোথাও ঢুকে যেতে পারেন, তাদের ভেবে দেখার অবকাশ আছে তারা প্রতারিত হচ্ছে কিনা? কেউ তাদের কোন বাজে উদ্দেশ্য নিয়ে কাজে লাগাচ্ছে কিনা? J এসব নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাববার সময় এসেছে!!!



মজার ব্যাপার হলো অতি উৎসাহীদের অত ধৈর্য্য নেই অপেক্ষা করার। তাই অনেকেই তৈরি করেন পিং হ্যাট, ব্লু হ্যাট, *** হ্যাট!!! যেখানে সেই ব্যাক্তিই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী!!! এডমিন! সো, ভাব নিয়ে তারা পোস্ট দেয় ক্রু লাগবে !! কিন্তু নিজেই জানেনা হ্যাকিং কি?  কেন গ্রুপের উৎপত্তি? লক্ষ্য কি? কোন ভিশন আছে কিনা? কোয়ালিটি আছে কিনা?  মনে রাখা উচিত একটা গ্রুপে সব ধরনের দক্ষ মানুষ দরকার! যোগ্য মানুষ দরকার। না হয় গ্রুপ শুধু নামেই! ২ দিন পর বানের জ্বলে ভেশে যাবে। কিছুদিন আগে একটা লিস্ট দেখেছিলাম বাংলাদেশের হ্যাকিং গ্রুপের যেখানে ৮০+ বা তারো বেশি গ্রুপের নাম ছিল। এসব গ্রুপের উত্থান সম্পর্কে আশা করি ধারনা পেয়েছেন। আর নতুনদের স্বপ্ন ভঙ্গের নামও হয় এসব তথাকথিত গ্রুপ গুলোর কাছেই। তাই এটা মাথায় রাখা উচিত, কিছু না জেনে নয়, বরং নিজেকে যোগ্য করে দরকার হলে ৩ বছর পর প্রতিষ্ঠিত কোন গ্রুপে ঢোকার চেষ্টা করা। কারো কথার গোলাম, পন্য হতে চাইলে কিছু না জেনেও খুব সহজে ঢুকতে পারেন J  নাউ, চয়েস ইজ ইউরস!!!  আরো অনেক কথা বলার ছিল, লেখা বড় হয়ে গেছে, পরের পর্বেও এই টপিক এর উপড় কথা হবে।  বলছিনা আমি কোন পীর সাহেব J আমার কথা শুনতে হবে। শুধু বলব নিজের বিবেক দিয়ে চলুন। আবেগ দিয়ে নয়। 


Friday, April 3, 2015

হ্যাকিং এবং হ্যাকার (পর্ব- ৩ )










স্বাগতম ! আগের পর্বগুলোতে  দেখেছি  হ্যাকিং নিয়ে প্রকৃত ধারনা নেই অধিকাংশ মানুষেরই!  আর তাই এসব নিয়ে মানুষের কৌতুহলের যেমন সীমা নেই , ঠিক তেমনি এ নিয়ে এর সাথে যারা জড়িত তাদেরও হয়রানির অভাব নেই। আবার ঠিক এ অজ্ঞতাকেই কাজে লাগিয়ে একদল (হকার) চালিয়ে যায় তাদের মানুষ ঠকানো কাজ কারবার। যার বেশির ভাগই ফেসবুক রিলেটেড। অদ্ভুদ অদ্ভুদ কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। বিভিন্ন পেইজে এডমিন এ থাকায় অনেক অদ্ভুদ অদ্ভুদ অভিজ্ঞতা হয়েছে!  



কিছু মানুষ  হ্যাকিং এর সাথে তাদের ব্যক্তিগত সমস্যাকে জড়িয়ে ফেলেন! কেন এরকম করে্ন সেটা আমার জানা নেই। ব্যাপার গুলো এরকম যে, কেউ উনার টাকা মেরে দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে অ্যাকশান নেওয়ার অনুরোধ, কেউ তার কাজিনের নামে ফেইক আইডি খুলেছে, সেই আইডি হ্যাক বা  অ্যাকশান নেওয়ার অনুরোধ, বেশীরভাগ হলো শিখানোর অনুরোধ, বিনিময়ে টাকার প্রস্তাব! আর কেউ কেউ আছেন তার বয়ফ্রেন্ডের আইডিতে কি হয় দেখতে চান, আবার কেউ চান তার গার্ল ফ্রেন্ডের আইডিতে কার সাথে কথা বলেন, কি কি করেন এসব দেখার অনুরোধ। এ ধরনের কাপল গুলোকে বলব, নিজেদের ব্যাক্তিগত সমস্যা নিজেরায় সমাধান করুন। কেমন রিলেশনে জড়ান যে খানে কেউ কাউকে বিশ্বাস করেন না? যেখানে সন্দেহ নামক  জিনিষ আছে সেই খানে কোন দিন কারো সাথে রিলেশান  টিকে থাকেনা। সন্দেহ না করে তাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করুন। তার পর ডিসিশান নিন!!! প্রেম ও করবেন, আবার সন্দেহ ও করবেন এটাতো হতে পারে না। দুই দিকেই মজা নিলে তো আর হবে না। মাঝখানে কিছু মানুষকে হয়রানী না করলেই কি নয়?



বাইদ্যাওয়ে আরো কিছু অদ্ভুদ ঘটনা দেখেছি, শেয়ার করার জন্য ইচ্ছা করছে কিন্তু সে এক বিশাল অভিজ্ঞতা। গরুর রচনা লিখতে হবে।  আর কিছু চেতনাবাদী মানুষ আছেন যারা সব কিছুতেই হ্যাকিং হ্যাকিং করেন। এখানেও কিছু মানুষের ভুল ধারনা আছে। ধরুন ইন্ডিয়া প্রতিনিয়ত সীমান্তে আমাদের মানুষ হত্যা করছে। আর তার বিরুদ্ধে গিয়ে আমরা সাইবার যুদ্ধ করেছি। কিন্তু আজ ও বন্ধ হয়নি মানুষ হত্যা। আজো পাইনি আমাদের ন্যায্য  হিস্যা। জিম্মি হয়ে আছি আমরা।  চেতনাবাদীদের কেউ কেউ সব কিছুতেই হ্যাকিং কে অস্ত্র মনে করেন। এটা হলো কেন? সাইট হ্যাক করেন? ঐটা হলো কেন তাদের সাইট হ্যাক করেন!!!  ভাই থামেন!!! ……………………………………………………………………………………………………………………………….. বাস্তবতা হলো সাইট হ্যাক করে প্রকৃত সমাধান কখনোই সম্ভব না। হ্যাঁ, হ্যাকিং করে প্রতিবাদ করা যায়, কিন্তু যুদ্ধ না। ২০১২ সালের সাইবার যুদ্ধ করে আমাদের প্রতিবাদ আর ঘৃনা প্রকাশ করতে পেরেছি। তাদের বোঝাতে পেরেছি আমরাও তথ্য প্রযুক্তিতে কোন অংশে ইন্ডিয়ার চেয়ে পিছিয়ে নেই। আমরা ফ্রীল্যাঞ্চিং এ তাদের পিছনে ফেলেছি অনেক আগেই।  সুতরাং চেতনাবাদী যারা আছেন তারা দয়া করে বাস্তবতা বোঝার চেষ্টা করবেন। হ্যাঁ, যারা হ্যাকার বা হ্যাকিং গ্রুপ আছে, যারা প্রতিবাদ করছে তারা তাদের কাজ করছে (সুবিধাবাদী/ল্যামারদের কথা বাদে প্রকৃতদের কথা বলা হচ্ছে) তাদের অবশ্যই ধন্যবাদ দেওয়া যায়। তারা তাদের জায়গা থেকে যতদুর সম্ভব করে যাচ্ছে। কিন্তু এতে কি সমাধান আদৌ সম্ভব? প্রশ্ন থাকল।





চেতনাবাদীদের এটাই বলব, সব কিছুতেই হ্যাকিং কে টেনে আনবেন না। এর জন্য প্রয়োজন রেভুল্যাশন! নিজেরা ঘরের কোণে বসে বসে শুধু হ্যাকারদের বললেই হবেনা, নিজেদের ও কিছু করতে হবে। ঘরে থেকে বের হোন। প্রতিবাদ করুন। রাস্তায় নামুন তাহলেই বুঝব আপনারা চেতনাবাদী! কিন্তু ঘরের কোণে বসে, এই পেইজ, সেই পেইজ, গ্রুপে গিয়ে যদি বলেন , ভাই, ভারতের বাতাসে বাংলাদেশের গাছ নড়ল কেন? ওদের সাইট হ্যাক করেন। তাহলে ধরে নিতে পারি আপনি সুবিধাবাদীদের একজন। জনমত তৈরি করুন, রাস্তায় নামুন! অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন! 


ভারতকে আমি আপনি সবাই ভীষন ঘৃনা করি। কিন্তু কয় জন বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব আপনার আমার ঘরে স্টার জলসা, স্টার প্লাস বন্ধ আছে? আপনার মা- বোনরা দেখে না? ইন্ডিয়ান সংস্কৃতি লালন এবং ধারন করে না? কয় জন বলতে পারবেন আপনার ঘরে কেউ হিন্দি সিরিয়াল না দেখে বাংলাদেশী টিভি চ্যানেলের কোন ভাল প্রোগ্রাম দেখেন? কয় জন বলতে পারবেন না আপনার ঘরে  সানী লিয়নের পিংক লিপ্স বা বেবী ডল চলে না?      জানি পারবেন না? তাহলে কিসের যুদ্ধ করব আমরা? যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার কথা ঘরে সে যুদ্ধ সাইবারে করলে তার ফলাফল কত টুকু হয় তা তো জানা হয়ে গেছে? তাই না? তাই বলে কি আমরা থেমে থাকব? চুপ করে থাকব? নো!!! নেভার!!! আমরা আমাদের কাজ , যার যত টুকু ক্ষমতা তা দিয়ে করা যাব। তাতে লাভ হোক আর না হোক। কিন্তু যারা আছেন সব কিছুতেই হ্যাকিং কে জড়িয়ে ফেলেন তাদের বলব, বাস্তবতা বুঝতে। আগে নিজের ঘর সামলান, আপনার মা/ বোন কে বোঝান। যদি পারেন তাহলেই আপনি বিজয়ী!

বাংলার মাটি হোক, রেন্ডিয়ান সংস্কৃতি মুক্ত! তাদের নগ্ন সংস্কৃতির আগ্রাসন মুক্ত, দুর্গন্ধময় সিরিয়াল মুক্ত! ঘৃন্যিত পাখি ড্রেসের পাখি মুক্ত! আর সুবিধাবাদী ভারতীয় দালাল মুক্ত!




(চলবে…..)  

আগের পর্ব





হ্যাকিং এবং হ্যাকার (পর্ব- ২ )






একেবারেই নতুন যারা তাদের জন্যই কথাগুলো  বলা।


সম্ভবত কেউ যদি প্রথমবারের মত তার ফেসবুক আইডি খুলে এবং সে এসেই প্রথম যে বিষয়টার প্রতি আগ্রহ থাকে সেটা হলো হ্যাকিং। হ্যাকিং কিংবা হ্যাকার যা কিছু দিন আগেও বাংলাদেশের মানুষের কাছে অজানা ছিল, ২০১২ সালে বাংলাদেশ আর ভারতের সাইবার যুদ্ধের পর আজ তা যেন খুলে বসেছে বিশাল ডানা। আজ সবাই চায় হ্যাকার হতে, সেটা যে কোন উপায়েই হোক না কেন! সাইবার যুদ্ধের সময় হ্যাকার, হ্যাকিং গ্রুপ ছিল হাতে গোনা। আর এখন? হ্যাকার গ্রুপের ছড়াছড়ি।


কেউ কিছু পারুক না পারুক, নামে বেনামে গ্রুপ খুলে যাচ্ছে আর শো অফ করে যাচ্ছে। আর তাদের শিকার হোন সাধারণত একেবারে জিরো লেভেলের মানুষেরা । যারা বোঝেনা হ্যাকিং কি? এটা স্রেফ তাদের কাছে যাদুর মত মনে হয়। তারা ভাবেন হ্যাকাররা জাদু জানে। যে কেউ চাইলেই ফেসবুক হ্যাক করতে পারে! আর ফেসবুকের প্রতি মানুষ ভয়াভহ রকমের আসক্ত! ব্যাতিক্রম ঘটেনি হ্যাকিং এর প্রতিও । তাই দুটোর সংমিশ্রনে মানুষ ফেসবুক (ঠিক ফেসবুক না , ফেসবুক আইডি। আইডি আর ফেসবুক সাইট এক জিনিষ না ) হ্যাকিং বা ফেসবুক আইডি হ্যাকিংকেই মনে করেন হ্যাকিং এর একমাত্র পদ্ধতি। সোজা কথায় তারা ভাবে হ্যাকিং মানেই ফেসবুক হ্যাকিং। যদিও আদৌ ব্যাপারটা তা না । তাই তো মানুষের রিকুয়েষ্ট দেখে অনেকেই মাথা ঠিক রাখতে পারেনা। কেউ কেউ আসে তার বয়ফ্রেন্ডের একাউন্ট হ্যাক করার জন্য, কেউ বা তার গার্লফ্রেন্ডের। কেউ বলে ঐ ছেলেটা আমার শত্রু, ওর আইডি হ্যাক করেন। সব কিছুতেই কেমন জানি একটা অধিকার হাকানো!!! ভাইরে! কেউ তাদের কি কোন কাজ নাই? তাদের কি পড়াশোনা নাই, তাদের কি ব্যাক্তিগত কাজ নাই? তারা কি মানুষ না? তারা কেন আপনার পিছনে সময় দেবে? তার কি সময়ের দাম নাই? অনেকেই টাকা অফার করেন! আসলে এখানে টাকার জন্য কেউ কাজ করে না। (ল্যামারদের কথা বাদ দিলাম। তারা তো প্রকাশ্যে ১০০ টাকা দিয়ে ফেসবুক আইডি হ্যাকান।) যারা আসলে কাজ করেন তাদের কে কখনোই টাকা দিয়ে কেনা সম্ভব না!


আর যারা এরকম দাবী করেন তাদের বোঝা উচিত কেউ তার কথার গোলাম না। তার কথা শোনার জন্য বাধ্য না। ওরা আপনার টাকা মেরে খেয়ে দেয়নি যে এভাবে যা ইচ্ছা আজগুবি টাইপের আবদার করবেন। আবার সাড়া না পেলে গালমন্দ করবেন!
হ্যাকিং অনেক রকম আছে। আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, আপনার ব্যাংক একাউন্ট হ্যাক, আপনার কম্পিউটার, স্কাইপ আইডি, ক্রেডিট কার্ড, পেপাল কার্ড, ওয়েব সাইট, এটিএম বুথ, এরকম আরো অনেক কিছু আছে যা হ্যাকাররা হ্যাক করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হ্যাকিং জিনিষটা প্রথম উঠে আসে প্রতিবাদ জানানোর ভাষা হিসেবে। ফেলানী হত্যা এবং সীমান্তে মানুষ হত্যা নিয়ে বাংলাদেশী হ্যাকাররা মিশন শুরু করে এবং বিষটি অতি আলোচিত হওয়ায় অতি অল্প সময়ে ছড়িয়ে যায় সব দিকে।
হ্যাকিং মানেই ফেসবুক হ্যাকিং ! এই ধারনাই বলে দেয় হ্যাকিং সম্পর্কে প্রকৃত ধারনা নেই ৮০% মানুষেরই। আর এটিকেই মোক্ষম সুযোগ হিসাবে ব্যাবহার করে সাইবার স্পেসে সেই অতিমাত্রিক হ্যাকিং এ আসক্ত কিছু ব্যাক্তি। যারা কিছু পারুক আর না পারুক, নিজেকে সবার সামনে বড় হ্যাকার হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া। ফেসবুক হ্যাকিং কে বড় অস্ত্র করে এই সব ভন্ড প্রতারকরা শুরু করে জঘন্যতম মানুষ ঠকানো নির্লজ্জ ব্যাবসা। যা দেখলে লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যায়। ভাবতে লজ্জা লাগে তারা ফেসবুক আইডি হ্যাক করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা করে। কিন্তু আইডি প্রতি তাদের দাবীকৃত অর্থ হলো ৫০,৭০,১০০ থেকে শুরু করে সবোর্চ ৩০০ টাকা। যাদের সামান্য কমেনসেন্স আছে তাদের বোঝা উচিত ফেসবুক কোটি কোটি ইউজারের একটি সাইট। যেখানে কাজ করেন সারা বিশ্বের সব চেয়ে বড় বড় সিকিউরিটি বিষেজ্ঞরা। তাদের মাসিক বেতন বাংলাদেশী টাকায় কোটি কোটি টাকা। আপনার কি মনে হয়, যে সাইটে কাজ করেন বিশ্বসেরা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, প্রোগ্রামার, সিকিউরিটি বিষেজ্ঞরা সেখানে এই স্বঘোষিত ২ টাকার হকার রা হ্যাক করে দেবে ফেসবুক? ফেসবুক যে সিকিউরিটি ব্যাবস্থা দিয়ে রেখেছে তাতে কারো ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক করা দুরুহ হয়ে পড়েছে। ইউজাররা যদি ঠিক মত সিকিউরিটি গুলো দিতে জানে তাহলে কখনোই বেহাত হবেনা। এমন কি কেউ পাসওয়ার্ড পেয়ে গেলেও না। সুতরাং যারা ফেসবুক ইউজ করেন তাদের জানা উচিত সিকিউরিটি গুলো কি কি। নিজের ঘরের দরজা বন্ধ না করে ঘুমালে ডাকাতি হওয়ায় স্বাভাবিক!


হ্যাকিং জগতটা অনেক বিশাল। এখানে এইটা পারি (স্পেসেফিক কিছু ) বলার আগে অনেক কিছু ভেবে দেখার অবকাশ আছে। কারন দেখা যায় ঐটাও রেগুলার আপডেট হচ্ছে। তাই অতীতে যাই শিখুন না কেন তা সময়ের সাথে নতুন করে আপডেট হচ্ছে আর সেগুলোও শিখতে হয়। আর আপডেটেট না হলে যা হবে, আগের শেখা বিদ্যাটা আর কাজ করবেনা। কারন প্রতিনিয়ত সব কিছু আপডেট হচ্ছে। কোন বাগ থাকলে তা তারা পরবর্তীতে ভার্সনে ফিক্সড করে আপডেট করছেন। সুতরাং এখানে কনস্ট্যান্ট কিছু নেই। মুখস্তের কিছু নেই। ক্রিয়েটেভিটি দরকার।



ব্যাপারটা এমন না যে এটা সিলেবাস, এটা এটা করলে আপনি শিখতে পারবেন। এমন না যে কিছু টিউটোরিয়াল দিলাম আর শিখে গেলেন। এটা সাধনার ব্যাপার, মেধার ব্যাপার, ক্রিয়েটিভিটির ব্যাপার। যার যত মেরিট, যে যত ক্রিয়েটিভ, সে ততই ভাল হ্যাকার হতে পারে । আর জিনিষ গুলো অর্জন করতে হলে নিজেকেই দিন রাত পরিশ্রম করে অর্জন করতে হয়। , ফোরাম, গুগল, ইউটিউব, সমগ্র ইন্টারনেটের জালে রয়েছে অজস্র রিসোর্স!!! যা আপনি সারা জীবন শিখেও শেষ করতে পারবেন না। আমরা যা করতে পারি তা হলো হেল্প! আসলে কেউ কাউকে শিখাতে পারে না। হেল্প করতে পারে মাত্রকারন আমি যে জিনিষ বুঝি তা আমার কাছে পানির মত সহজ। কিন্তু যখন কাউকে বোঝাতে যাই তখন সে অনেক কিছুই বুঝে না। বেসিক জ্ঞান গুলো না থাকলে সেটাই হয়। মনে রাখবেন কেউ শত চেষ্ট করেও আপনার মাথায় কিছু ঢোকাতে পারে না। সে কাজটা নিজেকেই করতে হবে। আপনার মস্তিস্ক, কান সম্পুর্ন আপনার। কেউ জোর করে আপনাকে গিলায় খাওয়ায় দিতে পারবেনা। এটা নিজেকে নিজের মত করে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। প্ল্যাটফর্ম এ পা না দিয়ে দাড়ানোর চেষ্টা করলে যা হয়, ঠিক তেমনটিই এখানে হয়। আর এটাই সবাই বেশি ফলো করে । কেউ কষ্ট করে শিখতে রাজিনা। সবাই শর্টকার্ট পদ্ধতিতে, হ্যাকার হতে চায়। অনেকেই দু একটা সাইট এসকিউএল করতে জানাটাকে হ্যাকিং মনে করেন, অনেকেই কয়েকটা সাইট ডিফেস দিয়ে ভাবেন অনেক বড় হ্যাকার হয়ে গেছেন। আবার অনেকেই নামের পাশে লিখেই ভাব নিতে থাকেন। এই তো দুই দিন আগের ঘটনা, একজন ইনবক্স করল ভাই এই সাইটের কলাম বের করেন।বললাম আগে শিখেন ভাল করেন। সে বলল ভাই আমি সব পারি। পরে ভার্সন বের করে দেখি এটা ভার্সন ৪। বললাম এটা হবেনা। তখন সে বলল ভাই ভার্সন টা মিডিয়াফায়ারে এ আপলোড দেন প্লিজ ! এই হলো অবস্থা! সব জানার উদাহরন! তার পরেও আমাদের অনেকেই এরকম। কিছুনা না জেনে জানার ভান করা। কিছু না জানাটা অপরাধ না! না জেনে জানার ভান করাটা অপরাধের।

আগের লেখা- ১ম পর্বঃ 

চলবে