Wednesday, November 12, 2014

সিকিউর করুন আপনার ফেসবুক আইডি!



বর্তমান সময়ে আমাদের জীবনের অনেকটা জুড়েই রয়েছে ফেসবুকের প্রভাব। আমাদের অনেক হাসি কান্না, সুখের স্মৃতি, সবই ফেসবুক কে ঘিরে গড়ে উঠেছে। আর যখন কোন কারনে আপনার একাউন্টটি বেহাত বা হ্যাকিং এর শিকার হয় তখন আপনার অনুভুতি কি আমরা বুঝি। ফেসবুক তার এত বেশি সিকিউরিটি রাখার পরও বেশীরভাগ মানুষ তাদের আইডিতে নিরাপত্তা দিতে জানেন না। যা খুব দুঃখ জনক। যার কারনে খুব সহজেই আপনার একাউন্টটি বেহাত বা হ্যাকিং এর শিকার হয়।



আবার অনেক ঠক , প্রতারক, ভন্ডরা মানুষের এই না জানা বিষয় গুলো নিয়ে তাদের বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এধরনে ভন্ডদের দিন শেষ করতেই আমরা বাংলাদেশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার্স আবার আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। এসব বেহায়া, ভন্ড , ডিজিটাল ফকির দের দিন শেষ!!! তাদের এসব নির্লজ পোস্ট দেখলে লজ্জায় মাথা নুয়ে আসে। মাত্র ৭০-১০০ টাকা দিয়ে নাকি তারা ফেসবুক আইডি হ্যাক করে। আসলে এসব সব ঠক। কেউ চাইলেই ফেসবুক হ্যাক করতে পারে না। আর ৭০ বা ৭ লাখ দিয়ে তো নয়ই। তারা শুধুই প্রতারনা করতে আসে আর কিছু নয়। সময় এসেছে, এসব ২ পয়সার ভন্ড হ্যাকারদের বাংলাদেশের সাইবার স্পেস থেকে চিরতরে বিদায় দেওয়ার। এখন থেকে যেখানেই এদের দেখা পাবেন সেখানেই ধোলায় দেবেন এধরনের পোস্ট দেখলেই বুঝবেন, এরা ঠক, প্রতারক। এদেরকে পাত্তা দিবেন না। এক সময় এরা নিজ থেকেই হারিয়ে যাবে।






ওকে, আসুন শুরু করা যাক ফেসবুক নিরাপত্তা বিষয়ক ইস্যুগুলো যে গুলো দিলে আপনার আইডি সুরক্ষিত থাকবে। আমাদের টিপস গুলো ফেসবুক সিকিউরিটি নিয়ে জানেন না এমন মানুষের জন্য। বেশির ভাগ মানুষই জানেন না তার আইডি কিভাবে সিকিউর করতে হয়। ফ্যান পেজে এরকম অসংখ্য রিকুয়েস্ট আমরা পেয়েছি, যারা তাদের ফেসবুক সিকিউর করার টিপস চেয়েছেন। তাদের সবার উদ্দেশ্যে আজকের এই টিউটোরিয়াল। আসা করছি সবাই উপকৃত হবেন। যারা জানেন, তারাও নতুন কিছু জেনে উপকৃত হবেন। ছবি ভাল করে দেখতে ছবির উপড় ক্লিক করবেন।

তো চলুন শুরু করা যাক...




সিকিউরিটি টিপস




১. পাসওয়ার্ড শেয়ার করবেন নাঃ আপনার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড ভুলেও অন্য কারো সাথে শেয়ার করতে যাবেন না। হোক সে আপনার স্বামী/স্ত্রী, বয় ফ্রেন্ড/ গার্ল ফ্রেন্ড। ফেসবুক একাউন্টটি একান্তই আপনার। 

বা কোন লোভনীয় লিঙ্ক দিয়ে বলা হল আপনার ফেসবুকের আইডি আর পাসওয়ার্ড দিতে, ভুলেও এসব ফাঁদে পা দিতে যাবেন না। ফেসবুক এর আইডি পাসওয়ার্ড দিন শুধু মাত্র এই লিঙ্কে https://ww.facebook.com .  এছাড়া অন্য কোন লিঙ্কে লগিন করবেন না। না হলে phishing এর শিকার হবেন চ্যাটে বা পোস্ট কেউ কিছু পাঠালে জিজ্ঞেস করে নিন লিঙ্ক বা ফাইলটি কিসের? ফাইলগুলো ক্লিক করার আগে অনলাইন স্ক্যানার দিয়ে চেক করে নিতে পারেন। অনলাইন স্ক্যানার এর মধ্যে খুব ভাল একটি সাইট ভাইরাস টোটাল। (http://www.virustotal.com)এখানে গিয়ে আপনার ফাইলটি স্ক্যান করে নিন।







এছাড়া আপনার ব্রাউজারটি সব সময় আপডেটেট রাখুন। 





. ফেসবুকে আজে বাজে এপস ব্যাবহার না করাঃ 

ফেসবুকে অনেক মজার মজার, গেইমস, ফান সহ আরো  এপস আমরা দেখতে পাই। কিন্তু আপনি কি জানেন, আপনি এপসটি চালু করার সময় আপনার একাউন্ট এর অনেক জিনিষ এক্সেস এর অনুমতি দিয়ে দিচ্ছেন? যার ফলে আপনার ব্যাক্তিগত তথ্য আর নিরাপদ থাকেনা।  তাই মজার মজার এপ চালানোর আগে ভাল ভাবে দেখে নেবেন। আর যেসব এপস চালাচ্ছেন না, সে গুলো ডিজেবল করে দিন। নিজের ব্যাক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে সব চেয়ে ভাল হয় থার্ড পার্টি এপস টোটালী ব্যাবহার না করেন।





. সেকেন্ডারী ইমেইল যোগ করুনঃ আপনার ফেসবুকে একাউন্টে মেইন বা প্রাইমারী মেইলের পাশাপাশি আরেকটি ইমেইল যোগ করুন যা সেকেন্ডারী ইমেইল নামে পরিচিত। যদি কোন কারনে আপনার ফেসবুক একাউন্টটি হ্যাক হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে আপনার সেকেন্ডারী ইমেইল দিয়ে আপনার আইডি রিকভার করতে পারবেন। এটি খুবই গুরুত্বপুর্ন।





. স্ট্রং পাসওয়ার্ড এবং সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ফাঁদঃ আপনার পাসওয়ার্ড যদি হয় ১২৩৪৫৬  তাহলে আপনার পাসওয়ার্ড দেওয়া আর না দেওয়া এক কথা। আবার যদি পাসওয়ার্ড হিসেবে আপনি ব্যাবহার করেন আপনার নিজের ফোন নাম্বার, নিজের নাম, আপনার রোল নাম্বার, আপনার গার্লফ্রেন্ডের নাম তাহলেও আপনার একাউন্টটির পাসওয়ার্ড দেওয়া আর না দেওয়া একই কথা। যে কোন মুহুর্তে হ্যাক হয়ে যেতে পারে আপনার প্রিয় একাউন্টটি। নিজের নাম, ফোন নাম্বার এসব যে কেউ অনুমান করে আপনার আইডি হ্যাক করতে পারে। বা ধরুন কেউ আপনাকে জিজ্ঞেস করল আপনার বাড়ী কই? ফোন নাম্বার , কোথায় পড়েন, স্কুল/কলেজ, ইউনিভার্সিটির নাম, বা আপনার প্রিয় মানুষের নাম। আর আপনি খুশিতে গদ গদ হয়ে সব বলে দিলেন। আসলে আপনি বুঝতেই পারেননি আপনি সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর শিকার হয়েছেন। আর কেউ আপনার এই ইনফরমেশন কে কাজে লাগিয়ে আপনার একাউন্ট হ্যাক করার চেস্টা করে অনেক সময় সফল ও হয়ে যায় । কারন আপনার হয়ত পাসওয়ার্ড ছিল আপনার ফোন নাম্বারটি ০১৭৮৯***** বা আপনার প্রিয় মানুষের নাম। 


তাই এধরনের পাসওয়ার্ড কখনোই দেবেন না। পাসওয়ার্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাবহার করুন ইউনিক কিছু যা অন্যের অনুমানের বাইরে।  একটি ভালমানের এবং স্ট্রং পাসওয়ার্ডের নমুনা দিলাম- D!gital_Fokirer_Din_Shesh!@#$% এটি আপনার মত করে আরো ছোট করে নিতে পারেন তবে স্পেশাল কারেক্টার, নাম্বার, সব ইউজ করে দুর্বেধ্য একটি পাসওয়ার্ড দিন। আর পাসওয়ার্ডটি এক মাস পর পর বা ১৫ দিন পর পর পরিবর্তন করুন । পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে Account Settings > General > Password.





. সিকিউর ব্রাউজিং করছেন কিনা চেক করুনঃ যখন ফেসবুক চালাচ্ছেন তখন খেয়াল করুন আপনি সিকিউর ব্রাউজিং করছেন কিনা। আগে যদিও এরকম একটি অপশন ছিল। কিন্তু ফেসবুক এখন বাইডিফল্ট তাদের সিকিউর ব্রাউজিং এনাবল করে দিয়েছে প্রতি ইউজারের জন্য। আপনি ফেসবুক সিকিউর ব্রাউজিং করছেন কিনা তা চেক করুন, যদিও এটি অটো হয়ে যায় আপনার ব্রাউজারের ইউআরএলে। যেখানে লিঙ্কটি হবে এরকম https://.




. লগিন এপ্রুভাল চালু করুনঃ   আপনার  পাসওয়ার্ড কেউ জানলেও আর হ্যাক হবে না আপনার একাউন্টঃ !!!!  হ্যাঁ, ঠিক তাই। ধরুন কেউ কোন ভাবে আপনার পাসওয়ার্ড পেয়ে গেল। কিন্তু তাতে কি? মেইন চাবি তো আপনার হাতে!!! সুতরাং এখন থেকে আপনার পাসওয়ার্ড কেউ জেনে গেলেও হ্যাক হতে হবে। এজন্য ফেসবুকের একটি দারুন এবং কার্যকর অপশন হচ্ছে লগিন এপ্রুভাল।

লগিন এপ্রুভাল হলো এমন একটি সিকিউরিটি ব্যাবস্থা, যেখানে ২ স্তরে আপনার একাউন্ট যাচাই করা হবে। প্রথমে আপনি ঠিক ঠাক পাসওয়ার্ড দিতে পারলে তারপর আপনার ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে একটি সিকিউরিটি কোড পাঠানো হবে। যা শুধু আপনার ফোনেই আসবে। যতক্ষন পর্যন্ত আপনার ফোনে আগত কোডটি আপনি না দিচ্ছেন ততক্ষন আপনার একাউন্টে লগিন হবে না। সুতরাং আপনার একাউন্ট আপনি ছাড়া আর কেউ লগিন করতে পারবেনা। যখনই ভিন্ন কোন ডিভাইস থেকে আপনার একাউন্টে লগিন করার চেস্টা করা হবে তখনই আপনার ফোনে সিকিউরিটি কোড আসবে, এবং ফেসবুক স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনাকে জানিয়ে দেবে, কেউ একজন আপনার একাউন্ট লগিন করার চেস্টা করছে! 



আসুন দেখি কিভাবে চালু করবেন লগিন এপ্রুভালঃ 

Settings>Security>Log In Approvals>Edit এ যান।

  • স্টেপ-১ঃ






এই কাজটি খুব ইমপরট্যান্ট!অবশ্যই করে নেবেন।

  • স্টেপ-২: তারপর Require a security code to access my account এর পাশের বক্সে ক্লিক করুন।তারপর এমন লেখা আসবে। 
  





  • স্টেপ-৩: Get Started এ ক্লিক করুন।তারপর Continue দিন।এখন Phone Number এর ঘরে প্রথমে শুন্য ছাড়া আপনার ১০ ডিজিটের মোবাইল নং দিন এবং Continue তে ক্লিক করুন।



     লগিন প্রোভাল চালু করার পর আপনার সিকিউরিটি সেটিং টা এমন দেখাবে—








    এরপর চালু হয়ে যাবে আপনার লগিন এপ্রুভাল । যদি ডিভাইসটি আপনার পার্সোনাল হয়, (ফোন/পিসি) তাহলে ব্রাউজার সেভ করে নিন। এতে বার বার আপনার কাছে কোড চাইবেনা। এখন অন্য কোন ডিভাইস থেকে লগিন করতে চাইলেই আপনার ফোনে একটি কোড আসবে, এবং এ কোড ছাড়া কোন অবস্থাতেই কাউকে লগিন করতে দেবে না।  সাথে সাথে আপনার কাছে একটি ই-মেইল ও চলে যাবে যে কেউ অন্য ডিভাইস থেকে আপনার একাউন্ট লগিন করার চেস্টা করছে। এক্ষেত্রে ফেসবুক ই-মেইলে আপনাকে করনীয় কি তা বলে দেবে।




    . Code Generator চালু করুন:  ধরুন আপনি লগিন এপ্রুভাল চালু করলেন। কিন্তু আপনার ফোন নেটওয়ার্কের বাইরে। বা আপনার ফোন নস্ট হয়ে গেছে। এখন কি হবে? চিন্তা নেই। এক্ষেত্রে ইউজ করতে পারেন কোড জেনেরাটর। যেখানে আপনাকে বেশ কিছু কোড দেওয়া হবে, এবং কোড চাইলে এই কোড দিয়ে লগিন করতে পারবেন । তবে এটি চালু করার জন্য কিছু কাজ করতে হবে। আসুন দেখি স্টেপ গুলো। 
     



    • স্টেপ-১ 



    • স্টেপ-২ঃ এর পর নিচের মত আসবে। এখন আপনার ফোন থেকে কোড জেনেরাটর এ গিয়ে এক্টিভ করতে কন্টিনিউ করুন।






     
    এর পর আপনাকে বেশ কিছু কোড দেওয়া হবে। যা আপনি সেভ  জায়গায় রেখে দিয়ে পরে কাজে লাগাতে পারবেন।






    . লগিন সেশন চেক করুনঃ ফেসবুক আপনার লগিন এর সময় আপনি কোন অপারেটিং সিস্টেম ইউজ করছেন, কোন লোকেশন থেকে, কোন ডিভাইস দিয়ে তা আপনার সুবিধার্থে জমা রাখে। যা আপনি প্রতিনিয়ত চেক করে বুঝতে পারবেন আপনার একাউন্ট অন্য কেউ ব্যাবহার করছে কিনা। এজন্য প্রথমে সেটিংস থেকে Where you’re Logged In ক্লিক করুন এর পর Edit এ ক্লিক করুন।


      


    এরপর নিচের ছবির মত আসবে।






    এর পর আপনি যে লোকেশনে সর্বশেষ ব্রাউজিং করেছেন, আপনার ওএস, সময়  দেখাবে। যদি দেখেন মিল নেই, তাহলে ধরে নেবেন আপনার একাউন্টটি আর সিকিউর নেই! এরকম কিছু দেখলে End Activity তে ক্লিক করুন। অর্থ্যাৎ ঐ সেশনটি বাতিল হয়ে যাবে। এরকম সেশন একটি চালু রাখুন। বাকী গুলো End Activity দিয়ে ক্লোজ করে দিন



    . Log Out করাঃ  এই কাজটি অনেক মানুষই করেন না। অনেক সময় সাইবার ক্যাফে বা বন্ধুর মোবাইল বা পিসি থেকে লগিন করার পর আর লগ আউট করেন না। ফলে এই সুযোগে বেহাত হতে পারে আপনার একাউন্টটি। তাই অন্য ডিভাইস থেকে ব্যাবহার করার পর অবশ্যই লগ আউট করে নিবেন। 

    ১০. আপনার ই-মেইলে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন রাখুনঃ   আপনার ই-মেইল ঠিকানাটিও অনেক গুরুত্বপুর্ন। তাই এটিকেও টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন দিয়ে রাখুন যাতে কেউ লগিন করলেও সিকিউরিটি কোড আপনার ফোনে আসে এবং আপনি ছাড়া আর কেউ লগিন করতে না পারে।



    ধন্যবাদ। আজ এই পর্যন্তই। সামনে আরো টিপস নিয়ে আসব বলে আশা করি। আপনারা ফীড ব্যাক দিন। আপনাদের ফীড ব্যাকের উপড় পরবর্তী টিউটোরিয়াল দেওয়া হবে। সবাই ভাল থাকুন, নিরাপদে থাকুন, নিরাপদে থাকুক আপনার ফেসবুক আইডি।
     



    আল্লাহ হাফেজ।

    [বিঃদ্রঃ লেখাটি কোথাও সরাসরি কপি পেস্ট করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সোর্স লিঙ্ক দেবেন এবং বাংলাদেশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার্সের অফিশিয়াল পেজের লিঙ্ক দিয়ে দেবেন https://www.facebook.com/bd.black.hat.hackers ]

    ধন্যবাদ।  
    Bl@ck ExpLoRer.